ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন | NID Card Correction

NID Card Correction

আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে ভোটার হালনাগাত করার সময় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে অথবা আপনি যদি কোনো তথ্য যোগ করতে চান বা কোন তথ্য আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে যুক্ত করতে চান। তাহলেই কেবল আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। সেই ভুল সংশোধন দুইভাবে করতে পারবেন। আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা জানবো কিভাবে আপনারা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন (NID Card Correction) করতে পারবেন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন (NID Card Correction) করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদের ফটোকপি, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের ফটোকপি। এসব কাগজপত্র আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য খুব দরকার। এই সকল ডকুমেন্ট বা প্রমাণাদির মধ্যে থেকে যে কোন ২ টি সনদ নিয়ে আপনার আবেদন পত্র নিয়ে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন (NID Card Correction) করতে পারবেন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন (NID Card Correction) করার ধাপসমূহ

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন / ভোটার আইডি কার্ড সংযোজন এবং বিয়োজনের জন্য বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করবে। কিন্তু, সবচেয়ে ভালো এবং সহজ পদ্ধতিসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।

ধাপ ১: ডকুমেন্টসগুলোর স্ক্যান/ ছবি নেয়া

এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য সবার আগে যে কাজটি করার লাগবে তা হচ্ছে – আপনার প্রয়োজনীয় ও দরকারি কাগজপত্র সমূহ ছবি / ক্যান করে নেওয়া। কেননা, সময়ের মধ্যে যদি আপনি আপনার দরকারি দলিলাদি না সংযোজন করেন তাহলে আপনার কাজটি হতে হতে হবেনা। তাই সবার আগে আপনাকে আপনার কাগজপত্র ভালভাবে স্ক্যান করে নিয়ে যদি বোঝা না যায় বা ঝাপসা আসে প্রয়োজন হলে Brightness ও Contrast বাড়িয়ে নিন।

যেসকল কাগজপত্র/দলিলাদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড / জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন (NID Card Correction) এর জন্য দরকারি, আপলোড করার সময় খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে সঞ্চয় করে রাখুন।

ধাপ ২: NID ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন

দরকারি সকল দলিলাদি / কাগজপত্র স্ক্যান করে নিয়ে নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রাখার পর এবার কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর জাতীয় পরিচয়পত্র উইং ওয়েবসাইটে আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে। যে একাউন্টের আন্ডারে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন করবেন।

কিছুকাল আগে ইসির জাতীয় পরিচয় পত্র উইং এ একাউন্ট তৈরি করা সহজ ছিলো কিন্তু বর্তমানে তা সম্ভব নয়। কেননা, বর্তমানে ফেস আইডেন্টিফিকেশনের জন্য অনেক সমস্যা হচ্ছে। এই একাউন্ট তৈরি করার বিষয়টি শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ছাড়া অন্যজন পারবেন না।

জাতীয় পরিচয়পত্র ওয়েবসাইটে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন

আপনি উপরিউক্ত লিংকটি ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন (NID Card Correction) করার জন্য একটি তৈরি করে নিতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে আপনার ভোটার আইডি কার্ড নম্বর এবং জন্মতারিখ দেওয়ার পর মোবাইল এবং ফেস ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে আপনি আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।

ধাপ ৩: তথ্য সংশোধন

ধাপ -২ যখন আপনি সফলভাবে পার হবেন তখন নিচের মতো একটি ওয়েবপেজ পাবেন। যেখানে আপনি আপনার প্রোফাইল পিক দেখতে পাবেন এবং সাথে সাথে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য এবং ঠিকানা নামের তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। আপনি যেটা সংশোধন করতে চান সেই ট্যাবে চলে যান।

nid card correction personal information

ধরি আপনি ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করছেন, তাই আপনার ব্যক্তিগত ট্যাব চালু থাকতে হবে। তারপর উপরের ডান পাশে নীল রংয়ের এডিট বাটনে ক্লিক করবেন। তারপর নিচের মত পেইজ আসবে। এখানে আপনি তথ্যগুলো পুনরায় টাইপ করে এডিট করার অপশন পাবেন। এডিট বাটনে ক্লিক করলে নিচের মতো একটা ওয়েবপেজ আসবে, যেখানে আপনার ওয়ার্নিং দিবে। যে আপনি কি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চান।

nid card correction

আপনি যদি রাজি থাকেন, তাহলে বহাল বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের মতো একটি পিক আসবে, যেখানে আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান, তার বাম পাশের টিক অপশনে ক্লিক করুন। এভাবে আপনার ভুল তথ্যগুলো প্রমাণপত্রের সাথে মিল রেখে সঠিকভাবে টাইপ করতে হবে।

তারপর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার সংশোধন করা তথ্যের পূর্বরুপ ও সংশোধিত রুপ দেখতে পাবেন। সব ঠিক থাকলে আবারও পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার সংশোধন করার জন্য যে ফি ধার্য হবে আপনার কাছে দেখাবে।

nid card correction

ধাপ ৪: ফি প্রদান

আপনার আবেদনটি কার্যকর করার জন্য, আপনাকে আপনার ভুল তথ্য সংশোধনের ধরণ অনুযায়ী ফি প্রদান করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ফি প্রদান করবেন তা ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার ব্রাউজার বন্ধ করা যাবেন। ফি প্রদান করেই আপনাকে আবার আবেদনের বাকি কাজ শেষ করতে হবে। ফি প্রদানের জন্য আপনি রকেট, বিকাশ, ওকে ওয়ালেট ব্যবহার করে খুব সহজে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।

এই অনুচ্ছেদের কিছু উপরের দিকে পেয়ে যাবেন কিভাবে আপনারা রকেট, বিকাশ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনার ফি প্রদান করবেন। তাই নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা।

বিকাশের মাধ্যমে সংশোধন ফি প্রদান

আপনি যদি নিজে একজন সংশোধনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার আবেদন ফি প্রদানে বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং অন্যতম। বিকাশের মাধ্যমে কিভাবে আপনি জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের ফি দিবেন বিকাশ এ্যাপ থেকে তা নিচে আলোচনা করা হলো। বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি বিকাশের মাধ্যমে দিতে পারবেন এর ধাপসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো।

বিকাশের মাধ্যমে সংশোধন ফি প্রদান

আপনার উপরিউক্ত ধাপগুলো শেষ হবার পর আপনাকে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে ফি পরিশোধ করতে হবে। সফল ভাবে ফি পরিশোধ হলে আপনি একটি পেমেন্ট রিসিট পাবেন যা আপনার মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আপনার মোবাইলে ফোনে চলে আসবে। পরবর্তীতে যদি আরও ইসিতে ফি প্রদান করতে হয় এর জন্য আপনি প্রক্রিয়াটি আপনার মোবাইলের বিকাশ অ্যাপে Save করে রাখতে পারেন।

রকেটের মাধ্যমে সংশোধন ফি প্রদান

রকেটের মাধ্যমে সংশোধন ফি প্রদান

আপনি চাইলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ফি রকেটের মাধ্যমে প্রদান করতে পারেন। এই জন্য আপনাকে আপনার মোবাইলে অবশ্যই রকেট অ্যাপ ইন্সটল থাকতে হবে। আপনার মোবাইলে যদি ইন্সটল না থাকে তবে আপনি Google Play Store থেকে ডাউনলোড করে নিবেন। ডাউনলোড করার পর আপনার মোবাইল নাম্বার ও পিন দিয়ে লগ ইন করে নিবেন। তারপর নিচে দেখানো ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি রকেটের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ফি রকেটের মাধ্যমে প্রদান করতে পারবেন। প্রক্রিয়া গুলো হলো-

১. প্রথমে আপনাকে Bill Pay অপশনটি সিলেক্ট করুন। এরপর সার্চবক্সে টাইপ করতে হবে Biller Number – 1000 এবং লিখে সার্চ করার পর EC Bangladesh এই বিলার কে সিলেক্ট করুন এবং নিচের মত অপশন পাবেন।

উপরিউক্ত ছবিতে দেখতে পাচ্ছে যে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার বসাতে হবে। আর অন্য জায়গায় অ্যাপ্লিকেশনের ধরণ দিতে হবে। তাই যে জায়গায় জাতীয় পরিচয় নাম্বার বসাতে বলবে, সেখানে আপনার ১০ বা ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন। অন্যদিকে যে জায়গায় আবেদনের ধরণ (Application Type) সিলেক্ট করতে বলবে, সে জায়গায় আবেদনের ধরণ লিখুন। জেনে নিন অথবা নিচে দেওয়া ধরণ অনুসারে একটি নম্বর বাছাই করুন।

যদি আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আইডি কার্ডের নাম, পিতা-মাতার নাম, স্বামী-স্ত্রীর নাম বয়স বা ঠিকানা সংশোধন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে আবেদনের ধরণ হিসেবে ১ নম্বর অর্থাৎ তথ্য সংশোধন। সুতরাং আপনি Application Type এ ১ Type করবেন।

তারপর যদি আপনি আপনার নিজের রকেট একাউন্ট থেকে ফি প্রদান করেন তাহলে Self সিলেক্ট করুন। আর যদি অন্য কারো একাউন্ট থেকে বা অন্য কারো জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আইডি সংশোধন করে থাকেন তাহলে Other অপশন সিলেক্ট করতে হবে এবং আপনার মোবাইল নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন।

তারপর Validate বাটনে ক্লিক করলে এবং রকেট একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি পরিশোধ করতে পারবেন।

ধাপ ৫: প্রমাণপত্র / ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট

প্রথম ধাপে আপনারা যে সকল কাগজপত্র রেডি করে আপনার ডিভাইসের যে ফোল্ডারে রাখতে বলছিলাম তার এখন প্রয়োজন পড়বে। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার ফাইল গুলো আপলোড করবেন। আপনার ডকুমেন্ট গুলো আপলোড করে আবেদন সাবমিট করতে পারবেন।

এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদের ফটোকপি, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের ফটোকপি।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি কত টাকা?

1. এনআইডির তথ্য সংশোধন ( NID Info Correction) – ২৩০ টাকা
2. অন্যান্য তথ্য সংশোধন (Other Info Correction) – ১১৫ টাকা
3. উভয় তথ্য সংশোধন (Both Info Correction) – ৩৪৫ টাকা
4. রিইস্যু ( Duplicate Regular) -৩৪৫ টাকা
5. রিইস্যু জরুরী ( Duplicate Urgent) – ৫৭৫ টাকা

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?

সর্বোচ্চ সময় ৪৫ দিন লাগে। তবে এটি নির্ভর করে আবেদনের ধরণ বা ক্যাটাগরির উপর। অনলাইনে উপযুক্ত প্রমাণপত্র আপলোড করে সঠিকভাবে আবেদন করার পর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোন ভেরিফিকেশনের জন্য হয়তো আরো ৫-১০ দিন দেরি হতে পারে।

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে?

ভোটার আইডি কার্ডে নাম সংশোধন করতে জেএসসি/এসএসসি/ এইচএসসি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন লাগে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকলে সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের কপি, বিয়ের কাবিন ও কমপক্ষে ২ সন্তানের আইডি এগুলোর যে কোন ১টি দেয়া যায়।

11 thoughts on “ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন | NID Card Correction”

  1. ৪৫ দিনের বেশি হয়েছে আমি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করছি। এখনও পেন্ডিং দেখায়। এখন আমার কি করা উচিত???

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Scroll to Top